এক বছরেও শোনা যায়নি হুইসেল


FavIcon
অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত : ০১ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ছবির ক্যাপশন: ad728


০১ নভেম্বর ২০২৩। হুইসেল বাজিয়ে ছুটে যায় ট্রেন। গঙ্গাসাগর থেকে নিশ্চিন্তপুর। গঙ্গাসাগর স্টেশন বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায়, আর নিশ্চিন্তপুর স্টেশন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় অবস্থিত।

বেশ তাড়াহুড়া করে আখাউড়া-আগরতলা আন্তর্জাতিক এ রেলপথের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেছিলেন দুই দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। তবে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের এক বছর পরেও ট্রেন হুইসেল বাজিয়ে ছুটে যায়নি।

তবে আশার বিষয় হলো, বাংলাদেশ অংশের রেললাইন নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। নভেম্বর মাসেই আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

ভারত অংশেও কাজ শেষ হওয়ার খবর মিলেছে। কিন্তু এ পথ দিয়ে কবে থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশনের আখাউড়া-আগরতলা অংশের প্ল্যাটফর্মের শেষ মুহূর্তের রংয়ের কাজ চলছে। স্টেশন ভবনের সামনের অংশে একটি শেড নির্মাণ কাজও প্রায় শেষের দিকে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, স্টেশন প্ল্যাটফর্ম ও ভবনের কক্ষ এখন পুরোপুরি প্রস্তুত।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা সদর থেকে আখাউড়া উপজেলার দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। সেখান থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথের মধ্যে গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশন। ওই স্টেশন থেকেই ভারতে ট্রেন ছুটে যাওয়ার কথা। এতে বাণিজ্য বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আখাউড়া গঙ্গাসাগর থেকে আগরতলার নিশ্চিন্তপুর পর্যন্ত মোট দূরত্ব ১২.২৪ কিলোমিটার, যার মধ্যে বাংলাদেশ অংশ পড়েছে ৬.৭৮ কিলোমিটার। এ প্রকল্পটির বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ন ৫৭ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং ভারতীয় ঋণ ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। বাংলাদেশ অংশের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪১ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেক্সমেকো।

নানা সংকটে দেড় বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের কাজ পাঁচ বছরের বেশি সময়েও শেষ হয়নি। ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। প্রথমে প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ১৮ মাস, কিন্তু করোনার প্রভাবসহ নানা কারণে পাঁচ দফা এর মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ নির্মাণ কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি বছরের জুনে করা হয়েছিল।

রেলপথ নির্মাণ কাজ শেষে গত ১৬ আগস্ট ‘গ্যাং কার’ বা ‘ট্র্যাক কার’ চালানো হয়। ‘গ্যাং কার’ নামে পরিচিত ‘ট্র্যাক কার’ বিশেষ আকৃতির একটি রেলের ‘ইঞ্জিন’। এর সঙ্গে দু’টি বগি সংযুক্ত করে উল্লিখিত পথে চালানো হয়। ২৫ সেপ্টেম্বর চালানো হয় মালবাহী ট্রেন, তবে এগুলো শুধুমাত্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মনিয়ন্দের শিবনগর পর্যন্ত চলাচল করে।

কয়েক দফায় ট্রায়াল রানের পর গত বছরের ৩০ অক্টোবর কন্টেইনার ট্রেনের মাধ্যমে চূড়ান্ত রান সম্পন্ন করা হয়। ৩১ অক্টোবর ওই রেলপথ দিয়ে ভারত থেকে চাল, ডাল, গম, আদা, রসুন, পেঁয়াজ ও পাথরসহ অর্ধশত পণ্য আমদানির অনুমোদন দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ১ নভেম্বর দু’দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। তবে অনেক কাজ বাকি রয়ে যায়।

আখাউড়া স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হাসিবুল হাসান জানিয়েছেন, সব ধরনের পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা গেলে বাণিজ্যে গতি বাড়বে। পণ্যবাহী ট্রেন আনুষ্ঠানিকভাবে চলাচল শুরু হলে ব্যবসায়ীরা চাহিদা মতো পণ্য আনতে পারবেন।

আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) গাজালা পারভীন রুহি জানিয়েছেন, এ পথে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হলে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও সমৃদ্ধ হবে। আশা করছি দ্রুতই এ পথে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেনে পণ্য পরিবহন শুরু হবে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের প্রকৌশলী রিপন শেখ বুধবার বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেছেন, ‘রেলপথ নির্মাণ আগেই শেষ হয়েছে। স্টেশনের কাজও একেবারে শেষের পথে। একটি শেডের চালা লাগানো এবং রংয়ের কাজ দু’একদিনের মধ্যে শেষ হবে। এরপরই এটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’